আন্তর্জাতিক নারী দিবস: বিশ্ব নারী দিবস ২০২৩ নারী অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি পালন করা হয়। জাতিসংঘ ২০২২ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ এর জন্য ।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে নারী দিবস ৮ মার্চ পালন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি নানান আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপিত হয়। নারীর অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সমতাভিত্তিক সমাজ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতি বছর এই দিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩
জাতিসংঘ ২০২২ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ”। এই মূল প্রতিপাদ্যের আলোকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- “টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য”।
Table of Contents
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কবে পালন করা ৮ মার্চ । বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি নানান আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপিত হয়। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশ জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা স্কিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়।
এই সম্মেলনে ফ্লোরা প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পূর্বে থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশেও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সারাদেশে শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদযাপন হয় বাংলাদেশে।
আরো পড়ুন- জমি রেজিস্ট্রেশন ফি ২০২৩
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কেন পালন করা হয়?
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবেই পালন করা হয়। নারী অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রদের নারী অধিকার ও বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য জাতিসংঘ দিবস হিসাবে ৮ মার্চকে ঘোষণা করার আহ্বান জানায়। বিশ্বজুড়ে লিঙ্গ সাম্যের উদ্দেশ্যে কাজের জন্য এই বিশেষ দিনটি পালন করা হয়।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ এর স্লোগান হলো ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’। চলতি ২০২২ সালের জন্য জাতিসংঘ এই দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘আজকের সমতায় টেকসই আগামী’ (Gender equality today for a sustainable tomorrow)। এ বছর দিবসটির স্লোগান ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ’।
নারীর কাজের অধিকার, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং কাজের বৈষম্যের অবসানের জন্য প্রতিবাদ করেন লক্ষ মানুষ। একই সঙ্গে রাশিয়ান মহিলারাও প্রথমবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘রুটি ও শান্তি’র দাবিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতা করেন। ইউরোপের নারীরা ৮ মার্চ শান্তি বিষয়ক কার্যক্রমকে সমর্থন করে বিশাল মিছিলে নামেন। ১৯১৩-১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদ জানানোর একটি প্রক্রিয়া হয়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস এর ইতিহাস
প্রথম ১৯০৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। ওই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আমেরিকায় নারী দিবস (National Woman’s Day) উদযাপন করা হয়েছিল। সোশ্যালিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা নিউ ইয়র্কে ১৯০৮ সালে বস্ত্রশ্রমিকরা তাঁদের কাজের সম্মান আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘট শুরু করেন।
নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ আর সমমানের বেতনের দাবিতে চলে হরতাল। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনের উদ্যোগের পর, ১৯ মার্চ অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইৎজারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস চিহ্নিত হয়েছিল।
নারী অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপি সমতাভিত্তিক সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। জাতিসংঘ ২০২২ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ”। এই মূল প্রতিপাদ্যেও আলোকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- “টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য”।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-বাংলাদেশ

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯(৩) অনুচ্ছেদে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। নারীদের যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে, রাষ্ট্রপতি দেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সহযাত্রী হিসেবে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার আশা একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব গড়ার কাজে পুরুষের মতো সমান অবদান রাখার প্রত্যয় নিয়ে নারীর এগিয়ে চলা আগামীতে আরো বেগবান হবে।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৩ উপলক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে পৃথক এক বাণীতে বিশ্বের সকল নারীর প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সকল অগ্রগতি এবং উন্নয়নে সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করেছে। সারাবিশ্বে তাই আজ বদলে গেছে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি।
নারীর কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বীকৃতি। তিনি বলেন, এদেশের নারী-পরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যেমন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তেমনিভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রশ্ন-উত্তর
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য কী?
এই দিবসটি উদ্যাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল।
নারী দিবসের স্লোগান ২০২২?
চলতি ২০২২ সালের জন্য জাতিসংঘ এই দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘আজকের সমতায় টেকসই আগামী’ । ২০২২ সালে নারী দিবসের ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ‘।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কত তারিখ?
৮ মার্চ হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস । ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস কখন স্বীকৃতি পায়?
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সারা বিশ্বের সকল দেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
আধুনিক সংস্কৃতি

আন্তর্জাতিক নারী দিবস রচনা
ভূমিকা:
কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে, বিজয়ী লক্ষ্মী নারী।
কবি নজরুল ইসলামপৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এই নারীর অবদান পুরুষ কখনই অস্বীকার করতে পারবে না। পুরুষের প্রতিটি সৃষ্টিকর্মের মধ্যে রয়েছে নারীর ভূমিকা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপরিউক্ত বিখ্যাত চরণদুটি আমাদেরকে একথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অথচ যুগ যুগ ধরে নারীর এই অবদানকে অবদমিত করে রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারী সমাজের মুক্তির একটি পদক্ষেপ মাত্র
আন্তর্জাতিক নারী দিবস: প্রতি বছর ৮ মার্চ সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। দিবসটির পূর্ব নাম ছিল ‘আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস’। বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালনের কেন্দ্রীয় বিষয় নারী। কিন্তু আঞ্চলিক ভিত্তিতে দিবসটি পালনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন রকম হয়।
কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রাধান্য পায়, আবার কোথাও নারীর আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা বেশি গুরুত্ব পায়। কোথাও বা নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে রেখে দিবসটি উদযাপিত হয়।
নারী দিবসের ইতিহাস: ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি করখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের উপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা।
এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে। ১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে।
এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগেন-এ। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়।
১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়।
এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
নারীর বর্তমান অবস্থা
বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
পরিবারের মধ্যে আপনজন কর্তৃক নারীর নির্যাতিত হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। কর্মস্থল, পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থায়, পথেঘাটে নারীরা বিভিন্নভাবে ইভ টিজিং এবং যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। নারী দিবস উদযাপন করে এসব অবস্থার উন্নতি করা না গেলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নারী নির্যাতন অনেক হ্রাস পেয়েছে।
নারীর নিরাপদ কর্ম পরিবেশ, কর্মঘণ্টা, মজুরি ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। সারাবিশ্বে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এই দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নির্যাতন প্রতিরোধ এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন দেশে এ ক্ষেত্রে এখনও বহু বাধা রয়েছে। এই বাধাগুলির মধ্যে প্রধান হলো-
- নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়।
- সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়।
- নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।
- নারীর ক্ষমতায়ন না থাকা।
- নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকা।
- কৃষিভিত্তিক সমাজ।
নারী উন্নয়নে করণীয়
নারী উন্নয়ন বলতে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়নকে বুঝানো হয়। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। এজন্য করণীয় হলো-
- – নারীর প্রধান শক্তি হলো শিক্ষা। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। তাই নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ নারী শিক্ষা বিস্তার।
- – নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীর উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।
- – নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা।
- – নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
- – রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন করা।
- – নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
- – নারীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়ক সেবা প্রদান করা ইত্যাদি।
দিবসটির তাৎপর্য: বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ও নারীদের অগ্রাধিকার একটি বহুল আলোচিত বিষয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল নারীদের অধিকার, বিশেষত কর্মজীবী নারীদের অধিকার আদায়ের প্রথম প্রচেষ্টা। এর সূত্র ধরে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর। জাতিসংঘের মাধ্যমে সাক্ষরিত হয়েছে বিভিন্ন চুক্তি ও সনদ। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এসব চুক্তি ও সনদ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষায় এসব চুক্তি-সনদ আইনে পরিণত হয়েছে। বাধ্য করেছে মালিকপক্ষ এবং সরকারকে নারীদের দাবী মেনে নিতে। তাই সমালোচনা থাকলেও আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।
উপসংহার: আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।